দেখ সারা তুমি যাই বলনা কেন এটা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব নয়। আমি সাফ বলে দিলাম। আমি কিছুতেই তোমার কথা মানতে পারব না। বোকার মতো কথা বল না আমান। গর্জে ওঠে সারা। তোমাকে আমার কথা মানতেই হবে। তুমি যাবে অবশ্যই যাবে। আগামীকালের কর্মশালায় তোমাকে যেতেই হবে। আমি জানি ওখানে কি নিয়ে আলোচনা হবে। কি নিয়ে আলোচনা হবে তুমি কি করে জান আমান? দেখ সারা তুমি নিজেকে যতটা বুদ্ধিমতী মনে কর না কেন আমাকেও এতটা বোকা মনে করনা। কেমন? মানে কি বলতে চাও তুমি। আমি জানি না বলেই তো তোমার কাছে জানতে চাচ্ছি। তুমি জান এবং জান বলেই আমাকে সেখানে পাঠাতে চাও। তোমাদের সরকার যে বাঙ্গালীদেরকে চিরতরে পঙ্গু করতে চায়। বাংলাদেশকে একেবারে নিশ্চিহ্ন করতে চায় সেটা আমি জানি। আর ওই কর্মশালায় এটা নিয়েই প্রধান আলোচনা। আমি পারব না আমার দেশের মানুষের বুকে গুলি চালাতে। দেশের এতবড় সর্বনাশ করতে। তুমি আমাকে আর জোর করনা সারা। না আমি তোমার কোন কথাই শুনব না। খাজা আশরাফের জামাতা হিসাবে তোমাকে সবাই আশা করে থাকবেন। দেখ! এই সব মায়াকান্না রাখ। তোমাদের স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এটা কখনোই বাস্তবে রূপ নেবে না। আব্বাজান বলেছেন বাঙ্গালীরা অতি শীঘ্রই পরাজিত হবে। কারণ মার্কিন রণতরী সপ্তম নৌবহর অতি দ্রুত বঙ্গোপসাগরের দিকে ধেয়ে আসছে পাকিস্তানীদের সাহায্য করার জন্য। সুতরাং বাঙ্গালী মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনা একেবারে নগণ্য। কিন্তু সারা এটা আমার দ্বারা কিছুতেই সম্ভব হবেনা। আমি আমার দেশকে ভালবাসি। দেশের মাটিকে ভালবাসি। দেশের মানুষকে ভালবাসি। আমি আমার রক্তের সাথে বেঈমানী করতে পারব না। ওহ আচ্ছা তুমি দেশকে ভালবাস। দেশের মানুষকে ভালবাস। তাই না। কি দিয়েছে তোমাকে তোমার দেশ তোমার দেশের মানুষ? কি পেয়েছ তুমি দেশের মানুষের কাছে? এতদিন কোথায় ছিল তোমার ভালবাসা? যেদিন তোমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে এই বর্ণাঢ্য জীবন দিয়েছিলেন আমার আব্বাজান। কোথায় ছিল সেই সব শুভাকাঙ্ক্ষী আর ভালোবাসার মানুষরা যেদিন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের একমাত্র কন্যা তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছিল। যার জন্য তোমার আজকের এই সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদা। তার প্রতি মোটেও দায়বোধ নেই তোমার? কোন ভালবাসা নেই তোমার? তুমি এতটা অকৃতজ্ঞ। এতটা নীচ আমার জানা ছিল না। ছি ছি আমান তুমি এতটা স্বার্থপর। হ্যাঁ। আমি জানি সারা তুমি আমাকে সেদিন করুণা করেছিলে। আর সে করুণার প্রতিদান আমাকে তো দিতেই হবে। হ্যাঁ হ্যাঁ করুণা করেছিলাম। তুমি আমার ভালবাসাকে খাট করে দেখ আমার কোন আপত্তি নেই। ধরে নেও আমি তোমাকে করুণাই করেছিলাম। আজ সে করুণার প্রতিদান আমি চাই। সারার চোখে পানি। আমায় তুমি ভুল বুঝ না সারা। তোমার ও তোমার পরিবারের প্রতি আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। আমি জানি তোমাদের ঋণ আমি শোধ করতে পারব না। কিন্তু আমি কি করে আমার দেশের শত্রুদের সাথে হাত মিলাব? ওসব কথা ভুলে যাও আমান। তুমিও পাকিস্তানী আর আমিও পাকিস্তানী। এক অখণ্ড পাকিস্তানের অধিবাসী আমরা। কোন যুক্তিতে কিসের ভিত্তিতে তোমরা আলাদা হতে চাও? হ্যাঁ মানলাম তোমাদের বাঙ্গালীরা শোষিত বঞ্চিত। তাই বলে অখণ্ড রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারনা।
তুমি বুঝতে পারছ না সারা। বাঙ্গালীদের স্বাধিকারের আন্দোলন সত্যিকার অর্থে কোন বিদ্রোহ নয়। এটা তাদের ন্যায্য পাওনা। কিন্তু তোমাদের পাকিস্তানী স্বৈরশাসকেরা বাঙ্গালীদের শোষণ করছে যুগের পর যুগ। আর পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে শুধু ধর্মের মিল ছাড়া আর কোন মিলই পাবেনা তুমি। শিক্ষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যে কোন মিল নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা হল তোমরা পাকিস্তানীরা তো বাঙ্গালীদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছ না। তোমরা নিজেদেরকে মনে কর শাসক আর বাঙ্গালীদের মনে কর তোমাদের প্রজা। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
আমি স্বীকার করছি আমান তোমরা বাঙ্গালীরা শোষিত, বঞ্চিত। কিন্তু তোমরা যা করছ সেটা তো সঠিক পথ নয়। রাষ্ট্রের প্রতি তোমাদের অনুগত থাকা উচিত। শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পালাবদল করতে পার তোমরা। দেখ সারা তোমার বয়স কম। আর তোমার শরীরে বইছে একজন পাকিস্তানীর রক্ত। তুমি এতসব বুঝবে না। তুমি আমার হৃদয়ের হাহাকার বুঝতে পারবেনা। তুমি সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর আবেগ ও চাওয়াকে বুঝবে না। কারণ তুমি বাঙ্গালী বলতে শুধু আমাকেই চিনেছ, জেনেছ। সমঝোতা, দাবী দাওয়া সবকিছুই করা হয়েছে। যুক্তফ্রন্ট প্রাদেশিক নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি তোমাদের স্বৈরশাসকেরা। শেখ মুজিবের ছয়দফা দাবীর কোন সুরাহা করেনি তোমাদের সরকার। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতেও কত গড়িমসি করেছে অনেক দিন। ৬৯ এর গন অভ্যুত্থানও টলাতে পারেনি স্বৈরশাসন থেকে। ৭০ এর সাধারণ নির্বাচনেও আওয়ামীলীগ জয়লাভ করলেও কেন তোমরা ক্ষমতা হস্তান্তর করনি?
আচ্ছা ঠিক আছে আমি মানলাম তোমার কথা। তোমার যুক্তি অখণ্ড। তোমার এসব প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারব না। তবে আমি চাইনা তুমি এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে নিজেকে জড়াও। বাঙ্গালীদের না আছে অস্ত্র না আছে ট্রেনিং। অশিক্ষিত মূর্খ বাঙ্গালীরা কি করে একটা শক্তিশালী সুসংগঠিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে? না না। আমি তোমাকে কিছুতেই ওদের সাথে যোগ দিতে দিব না। আফটার অল তুমি গভর্নরের জামাই। গভর্নরের জামাই তো কি হয়েছে? আমার মাথা কিনে নিয়েছ নাকি? উত্তেজিত কণ্ঠ আমানের। না আমি তোমাকে সেভাবে বলছি না। তোমাকে সতর্ক করছি মাত্র। তোমার চিন্তাধারা সংশোধন করার জন্য। তোমার এমন দেশদ্রোহী চিন্তা ভাবনার জন্য আব্বাজান মনে কষ্ট পাবেন। তিনি তোমাকে অনেক ¯েœহ করেন। সে আমি জানি সারা। কিন্তু তুমি কেন বুঝতে পারছ না। আমি মনে প্রাণে একজন বাঙ্গালী। বাঙ্গালীর রক্ত বইছে আমার শরীরে। বাংলার আকাশ বাতাস ও প্রকৃতির কোলেই বেড়ে উঠেছি আমি। আমি কি করে আমার রক্তের সাথে বেঈমানী করব। ওহ আল্লাহ আমি এখন কি করব দুহাতে মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে আমান।
২৫ শে মার্চের কালো রাতের পাকিস্তানী হানাদারদের নৃশংস গণহত্যা আমানের চিন্তাধারাকে আমূল পাল্টে দেয়। প্রতিশোধ স্পৃহায় উজ্জীবিত হয় আমান। কিন্তু বিধিবাম। ঘরের শত্রু বিভীষণ। সে এখন এক পাকিস্তানী দোসরের আদরের জামাই। করাচীতে তার সম্মানজনক চাকুরী এবং অভিজাত মহলে তার দৃপ্ত পদচারণ আমানকে দেশ মাতৃকার টান সাময়িক ভুলিয়ে দিলেও তার বাঙ্গালী সত্ত্বা কখনও মুছে যায়নি হৃদয় থেকে। আমানের বুকেও প্রতিশোধের আগুন। কিন্তু তার হাত পা বাধা। সাবেক গভর্নরের জামাই হিসাবে তার রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি ও নিরাপত্তা। যার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে দেশে ফিরে আসা তার জন্য অসম্ভবই বটে। তবুও আমান স্বপ্ন দেখে একদিন সে দেশে ফিরে আসবে। কাঁধে কাঁধ রেখে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে লড়বে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।